মুখে রুচি আনার উপায়:কি খেলে মুখে রুচি আসে?
আমাদের অনেক সময় মুখের স্বাদ বা রুচি চলে যায় কিছু খেতে ইচ্ছা করে না। গ্যাসের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, যকৃৎ বা কিডনি রোগ, জ্বরের বা সংক্রমণের পর, নানা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়, এমনকি মানসিক চাপ বা বিষণ্নতার কারণেও রুচি কমে যায়।
এতে দিন দিন যেমন ওজন কমতে থাকে তেমনি অপুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দেয় শরীরে। তখন আমরা ভাবতে থাকি কি খেলে আমাদের মুখে রুচি ফিরে আসবে? আগের মত খাবারের স্বাদ পাবো। মুখে রুচি আনার উপায় গুলো নিয়ে আজকে আমাদের আলোচনা।
কি খেলে মুখে রুচি আসে?
১) মুখে রুচি বাড়াতে প্রতি দিনের খাবার তালিকায় ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার যেমন আমলকি, আমড়া, লেবু, কমলা, মাল্টা, আনারস, আঙ্গুর, ব্রুকলি, গাজর, টম্যাটো, ক্যাপসিকাম রাখতে হবে।
২) রুচি বাড়াতে কাঁচা আমলকী বা শুকনো আমলকীর গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৩) আদাকুচি বা আদার রস গরম পানি বা চায়ের সঙ্গে, পুদিনাপাতা, এলাচিগুঁড়া বা চিনি দিয়ে খেতে পারেন।
৪) জিংকযুক্ত খাবার যেমন ডিম, দুধ, পনির, বাদাম, সিড, রেডমিট, অরগ্যানমিট, মাশরুম, পালংশাক মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
৫) খাবার আগে সামান্য আদা চিবিয়ে খেলেও মুখে রুচি বাড়ে। খাওয়ার আগে, মাঝ খানে পানি না খেয়ে খাওয়ার কিছুক্ষণ পর পানি খেতে হবে। বিভিন্ন সুস্বাদু মসলা যোগ করে খাবারের স্বাদ বাড়াতে হবে। খাবারের সঙ্গে সামান্য আচার খেলেও রুচি বাড়ে। পুদিনার রসও খেতে পারেন অথবা সালাদ বা তরকারিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
৬) গ্যাসের সমস্যা না থাকলে খাবারে রুচি বাড়াতে নানা ধরনের মসলা যোগ করা যায়। যেমন: গোলমরিচ, এলাচি, আদা, রসুন, ভিনেগার, লেবুর রস, নানা পদের আচার দিয়ে খাবার খেতে পারেন। এগুলো রুচিবর্ধক। কিন্তু গ্যাসের সমস্যা হলে একটু কম মসলা দিয়ে সহজপাচ্য খাবার খান।
৭) ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, চিপস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো রুচি কমিয়ে দেয় ও অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে।
৮) রোগ এবং জ্বর সর্দি আক্রমণের পর কিছুদিন অরুচি থাকে। এ সময় অনেক পরিমান পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন। স্যুপ, শাকসবজি, ফলমূল, ফলের রস, মিল্কশেক, আমিষ ইত্যাদি জাতীয় খাবার খান।
৯) প্রতি দিন ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে হবে। তাতে খাবার সঠিকভাবে হজম হবে এবং ক্ষুধা লাগবে। যেহেতু মুখে অরুচি থাকলে বেশি খাবার খাওয়া যায় না, তাই অল্প করে একটু পরপর খাবার খেতে হবে।
১০) খাবার তালিকায় অবশ্যই পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন মাখন, ঘি, মিল্কশেক, ব্যানানাশেক, অ্যামন্ডমিল্ক রাখতে হবে। যাতে অল্প খাবার খেলেও ওজন না কমে এবং অপুষ্টি দেখা না দেয়।
শিশুর মুখে রুচি আনার উপায়:
অনেক মা বাবার একটা অভিযোগ থাকে বাচ্চারা ঠিক মতন খাবার খায় না। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন শেষ থাকেনা যে শিশু কেন খেতে চায় না, তার কারণ খুঁজে বের করেন না অনেকেই। পুষ্টিকর খাবারের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েই শিশু তার পেট ভরিয়ে রাখতে পছন্দ করে। এ অবস্থায় মা-বাবার করণীয় কী? চলুন, তা জেনে নেয়া যাক।
শুরু থেকেই শিশুর খাবারের ব্যাপারে আপনাকে একটি সঠিক পরিকল্পনা বা নিয়ম মেনে চলতে হবে। সন্তানকে দৈনিক পাঁচবার খেতে দিতে হবে। এ খাবার কখনো আলাদা করে খাওয়াবেন না। আপনার সন্তানকে পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে বসে খাবার গ্রহণ করতে দিন। এটি আপনার শিশুর রুচি বাড়িয়ে দেবে।
শিশুর খাবারে আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে খাওয়াতে পারেন বিশেষ কিছু খাবার। খাবারগুলো হলো–
১) কুমড়ার বীজ ফেলে না দিয়ে তা শুকিয়ে সসপ্যানে ভেজে সন্তানকে খাওয়াতে পারেন। এ বীজ কোনো কিছু খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া এ বীজ হজমপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
২) গাজরের উপকারিতা অসংখ্য। এটি ক্ষুধা বাড়ানোর প্রবণতার মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করেছে। এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা অনেক পুরোনো কৌশল। খাবারের প্রয়োজনে প্রায়ই ক্ষুধা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রায় ৩০ মিনিট আগে বাচ্চাকে গাজর খেতে দিন।
৩) ক্ষুধা বৃদ্ধির সঙ্গে একাধিক অসুখ নিয়ন্ত্রণ করে আদা ও তুলসী। বাড়িয়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ শক্তিও। তাই সন্তানকে নিয়মিত আদার রস তুলসীর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
৪) অগ্নিমান্দ্য দূর করে ক্ষুধা বাড়ায় তেঁতুল। তাই শিশুর ডায়েটে তেঁতুল বা এর চাটনি রাখতে পারেন।
৫) আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। প্রতিদিন খালি পেটে আমলকী খেলে খিদা বাড়ে। এর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও জোরদার হয়।
৬) রান্নার কাজে ব্যবহৃত হলেও এ মসলা শিশুদের খিদে বাড়িয়ে তুলতে পারে। দারুচিনি পিষে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে দিন বাচ্চাকে। এতে দুধের স্বাদ ও শিশুর খিদে দুই-ই বাড়বে।
৭) লেবু দ্রুত খোদা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তাই আপনি আপনার সন্তানের জন্য লেবুর রস তৈরি করতে পারেন এবং খাওয়াতে পারেন। এ রস পান করার পর শিগগিরই বাচ্চার পাচক সিস্টেম সক্রিয় হওয়া শুরু হতে থাকবে এবং সে খাবার ও চাইবে।
৮) পাঁচক তন্ত্র কে ভালো করে তোলে এবং সাথে সাথে আমাদের আরো উদ্দীপক করে তোলে দই। সেই জন্য আপনি যদি পারেন আপনার শিশুর খাবারে নিয়মিত দই রাখতে পারেন। এই দই আপনার শিশুর ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে ভিটামিন এর ও ঘাটতি পূরণ করে।
৯) এটি একধরনের অক্টা হার্বাল আয়ুর্বেদীয় গুঁড়ো, যা বেশ জনপ্রিয়। শিশুর ক্ষুধা বাড়িয়ে তুলতে ভাত ও ঘি দিয়ে এই গুঁড়ো মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে পারেন।
১০) এছাড়া প্রতিদিন নতুন ও ভিন্ন স্বাদের খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসতে হবে। এভাবেও শিশুর মধ্যে খাওয়ার আগ্রহ তৈরি হবে। শিশুকে কাউন্সেলিং করতে হবে। খাবার কেন খেতে হবে, খেলে কী হবে এসব বিষয়ে শিশুর সঙ্গে মজা করে আলোচনা করতে হবে। এভাবে শিশুকে খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।
১১) শিশুকে চিবিয়ে এবং নিজে নিজে খাবার খেতে উত্সাহ দিতে হবে। শিশুকে দেরিতে ঘুমানো এবং দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস ত্যাগ করাতে হবে। এতেও খাবারে অরুচি হয়। জিংকজাতীয় খাবার, যেমন—মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, বাদাম। এগুলো রুচি ফেরাতে সাহায্য করে। এসব খাবার খাওয়াতে হবে।
বাচ্চাদের মুখে রুচি হওয়ার সিরাপ:
অনেক সময় বাচ্চাদের মুখে রুচি ফিরিয়ে আনতে ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। বাচ্চাদের মুখের রুচির জন্য ফার্মেসি গুলোতে বিভিন্ন ধরনের সিরাপ পাওয়া যায়। তবে বিশেষজ্ঞ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ধরনের ধরনের ঔষধ নিজে সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন এবং বাচ্চাদের করাবেন না।
ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার রুচির সিরাপ ঔষধ:
১) জিংক বি সিরাপ
খাওয়ানোর নিয়ম: একদম ছোট্ট শিশুদের এক চা চামচ করে প্রতিদিন দুইবার খাওয়াতে হবে। আর বাচ্চা শিশুদের প্রতিদিন দুই চামচ করে এক থেকে তিনবার খাওয়াতে হবে। অথবা একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মত। খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে খাওয়াতে পারেন।
২) পোগো সিরাপ
খাওয়ানোর নিয়ম: যেসব শিশুদের বয়স এক মাস থেকে বারোমাস তাদের প্রতিদিন একবার করে আধা চামচ খাওয়াতে পারেন। আর যেসব শিশুদের বয়স এক বছর থেকে চার বছর তাদেরকে এক চা চামচ করে প্রতিদিন একবার খাওয়াতে হবে। চার বয়সের ঊর্ধ্বে যে কোন বাচ্চাদের দেড় (১.৫) চা চামচ করে প্রতিদিন একবার খাওয়াতে হবে। এটি খাওয়ানোর সাথে আপনি আপনার বাচ্চাকে পানি কিংবা দুধ খাওয়াতে পারেন। তাহলে আশা করি ভালো ফল পাবেন।
এছাড়া আরো কিছু ছোট বাচ্চাদের রুচির সিরাপ ঔষধ এর নাম উল্লেখ করা হলো:
- -Seas Plus Syrup
- -জিংক সিরাপ
- -Bextram Kids Syrup
- -Filwel Kids Syrup
- -Wellkid Syrup
- -Dorakid Syrup
- -Mixavit Syrup
বড়দের মুখে রুচি ফিরিয়ে আনতে সিরাপ এবং ট্যাবলেট:
আমাদের দেশের ফার্মেসিগুলোতে ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মুখে রুচি ফিরে আনতে বিভিন্ন ধরনের সিরাপ এবং ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ঔষধ গ্রহণযোগ্য নয়।
বড়দের ব্যবহারযোগ্য সিরাপ এবং ট্যাবলেট গুলো হলো:
- ১) Vave 10 mg: খাওয়ার ১৫ থেকে ৩০ মিনিট আগে দিনে তিনবার খেতে হবে।
- ২) Deflux 10 mg: খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে দিনে তিনবার সেবন করতে সেবন করতে হবে।
- ৩) Rave 10 mg: খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে দিনে দুইবার সেবন করতে হবে।
- ৪) Bicozin syrup: দিনে দুই চা চামচ করে দুইবার খাওয়ার পরে সেবন করতে হবে।
- ৫) Megestrol syrup: দিনে দুইবার দুই চামচ করে সেবন করতে হবে।