কমলাপুর থেকে নরসিংদী ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়া ২০২৪
ঢাকা থেকে নরসিংদী যাওয়ার সবথেকে সহজ মাধ্যম হলো রেলপথ। এই রুটে যাতায়াত যেমন সহজ ও আরামদায়ক ঠিক তেমনই সাশ্রয়ী। তাইতো কমলাপুর থেকে নরসিংদী যাওয়ার জন্য বেশিরভাগ যাত্রী রেলপথকে বেছে নেয়।
অনেকেই কমলাপুর ট্রেনের সময়সূচী ২০২৪ জানার জন্য ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করছেন। তাই আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো কমলাপুর থেকে নরসিংদী ট্রেনের সময়সূচি। কমলাপুর থেকে নরসিংদীর উদ্যেশ্যে কী কী ট্রেন ছেড়ে যায়, কখন কোন ট্রেন ছাড়ে, ট্রেনের ভাড়া কত টাকা এই সকল বিষয় বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। তাছাড়া অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং এর নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কমলাপুর থেকে নরসিংদী ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে।
ট্রেনের অবস্থান জানার উপায়
অনেকেই ট্রেনের সঠিক অবস্থান জানার উপায় জানে না বিধায় রেলপথে যাতায়াত করতে চায় না। যতো কষ্টই হোক সড়কপথে যাতায়াত করে। কিন্তু আপনি চাইলে খুব সহজেই যে কোনো ট্রেনের অবস্থান জানতে পারবেন। ইন্টারনেট এর এই যুগে আপনি আপনার হাতে থাকা মোবাইল এর মাধ্যমে খুব সহজেই ট্রেনের অবস্থান জানতে পারবেন। ট্রেনের নাম লিখে সার্চ করলেই ঐ ট্রেনের সময়সূচি বেরিয়ে আসবে। ট্রেন ছাড়ার সময় ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় জেনে নিলেই বুঝতে পারবেন ট্রেনের সঠিক অবস্থান। যেমন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ঢাকা টু নরসিংদী ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে জানতে পারবেন। ফলে কমলাপুর থেকে নরসিংদী রুটে চলাচলকারী ট্রেনের অবস্থান আপনি খুব সহজেই বের করে ফেলতে পারবেন।
তাছাড়া সরাসরি স্টেশনে গিয়েও কাউন্টার থেকে খোঁজ নিতে পারবেন৷ কাউন্টার থেকে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে আপনার কাঙ্খিত ট্রেনটি এখন ঠিক কোথায় অবস্থান করছে। তবে ট্রেন সব সময় তার সিডিউল মাফিক চলাচল করে। তাই স্টেশনে না গিয়ে বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটে ট্রেনের সময়সূচি দেখে এর অবস্থান বের করে নিতে পারবেন। আশাকরি ট্রেনের অবস্থান জানার উপায় সম্পর্কে আর কোনো প্রশ্ন নেই।
কমলাপুর থেকে নরসিংদী ট্রেনের তালিকা
কমলাপুর থেকে নরসিংদী রুটে নিয়মিত মোট ৭ টি ট্রেন চলাচল করে। চলুন প্রথমেই কমলাপুর থেকে নরসিংদী ট্রেনের নাম জেনে নেয়া যাক।
- উপকূল এক্সপ্রেস (৭১২)
- মহানগর এক্সপ্রেস (৭২২)
- এগারো সিন্ধুর প্রভাতী (৭৩৭)
- উপবন এক্সপ্রেস (৭৩৯)
- এগারো সিন্ধুর গোধূলি (৭৪৯)
- কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস (৭৮১)
- চট্রলা এক্সপ্রেস (৮০২)
এবার প্রতিটি ট্রেনের সময়সূচি ও বন্ধের দিন সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। রেলপথে ঢাকা থেকে নরসিংদীর দূরত্ব মাত্র ৪৫ কিলোমিটার। তাই মাত্র এক থেকে দেড় ঘন্টা সময়ের মধ্যেই ট্রেনে চেপে ঢাকা থেকে নরসিংদী যাওয়া সম্ভব। আর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোটামুটি দিনের সব সময়ই কোনো না কোনো ট্রেন এই রুটে চলাচল করে।
উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি
উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে দুপুর ৩ টা ১০ মিনিটে ছাড়ে। নরসিংদী স্টেশনে গিয়ে পৌছায় বিকাল ৪ টা ১৮ মিনিটে। ট্রেনটি মঙ্গলবার বাদে সপ্তাহে ছয়দিন একই সময়ে নিয়মিত চলাচল করে।
মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি
মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে রাত ৯ টা ২০ মিনিটে ছাড়ে। নরসিংদী স্টেশনে গিয়ে পৌছায় রাত ১০ টা ২৮ মিনিটে। ট্রেনটি রবিবার বাদে সপ্তাহে ছয়দিন একই সময়ে নিয়মিত চলাচল করে।
এগারো সিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনের সময়সূচি
এগারো সিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে। নরসিংদী স্টেশনে গিয়ে পৌছায় সকাল ৮ টা ২২ মিনিটে। সপ্তাহে একদিন বুধবার ট্রেনটি সাপ্তাহিক ছুটিতে থাকে
উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি
উপবন এক্সপ্রেস রাত ১০ টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। নরসিংদী স্টেশনে পৌছায় রাত ১১ টা ০৯ মিনিটে৷ ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ বুধবার।
এগারো সিন্ধুর গোধূলি ট্রেনের সময়সূচি
এগারো সিন্ধুর গোধূলি প্রতিদিন বিকাল ৬ টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর থেকে যাত্রা শুরু করে। নরসিংদী পৌঁছায় সন্ধ্যা ৭ টা ৫৩ মিনিটে৷ এই ট্রেনটির কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। অর্থাৎ সপ্তাহে সাতদিন-ই এগারো সিন্ধুর গোধূলি কমলাপুর থেকে নরসিংদী রুটে চলাচল করে।
কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি
কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস নিয়মিত সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন ত্যাগ করে। নরসিংদী স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায় সকাল ১১ টা ৩৬ মিনিটে। ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার।
চট্রলা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি
উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ে। নরসিংদী স্টেশনে গিয়ে পৌছায় দুপুর ২ টা ৫০ মিনিটে। ট্রেনটি শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয়দিন একই সময়ে নিয়মিত চলাচল করে।
কমলাপুর থেকে নরসিংদী ট্রেনের ভাড়া
কমলাপুর ট্রেনের সময়সূচী ২০২৪ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ট্রেনের টিকেট মূল্য। তাই চলুন কমলাপুর থেকে নরসিংদী ট্রেনের ভাড়া সম্পর্কে জেনে নেই। এখানে শ্রেণিভেদে টিকেট মূল্য উল্লেখ করা হলো।
- শোভন টিকেট মূল্য ৬০ টাকা
- শোভন চেয়ার টিকেট মূল্য ৭০ টাকা
- প্রথম শ্রেণির চেয়ার টিকেট মূল্য ৯০ টাকা
- প্রথম শ্রেণি বার্থ টিকেট মূল্য ১৪৪ টাকা
- স্নিগ্ধা চেয়ার টিকেট মূল্য ১৩৩ টাকা
- এসি সিট টিকেট মূল্য ১৫৬ টাকা
- এসি বার্থ টিকেট মূল্য ২৩৬ টাকা
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইন
কিছুদিন আগেও রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে লাইন ধরে টিকেট সংগ্রহ করা লাগতো পুরো একটা দিন নষ্ট হতো এই টিকেট সংগ্রহ করার পেছনে। কিন্তু সুখবর এই যে এখন চাইলেই আপনি ঘরে বসে আপনার হাতে থাকা মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি ট্রেনের টিকেট অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখতে পারবেন। অনলাইনে টিকেট কেটে রাখলে আপনাকে আর টিকেট এর জন্য ভোগান্তি পোহাতে হবে না। প্রশ্ন হতে পারে যে সর্বোচ্চ কতদিন আগে অনলাইনে টিকেট বুকিং দিয়ে রাখা যাবে? এক্ষেত্রে মনে রাখবেন আপনার যাত্রার ৫ দিন আগে আপনি অনলাইন এর মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট বুক করে রাখতে পারবেন। যদিও আগে সময়সীমা ছিল ১০ দিন। কিন্তু বর্তমানে নিয়ম পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ সময়সীমা ৫ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনেকেই অনলাইনে টিকেট বুক করতে পারেন না। তাদের জন্য অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং এর পুরো প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করা হলো।
- প্রথমে আপনার প্রয়োজন হবে একটি স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ। নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।
- এবার গুগল ক্রোম ব্রাউজারে গিয়ে https://eticket.railway.gov.bd/ এড্রেসটি সার্চ করে রেলওয়ে সার্ভিস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চলে যেতে হবে। অথবা প্লেস্টোর থেকে সরাসরি রেল সেবা অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
- যেহেতু রেলওয়ে ওয়েবসাইটে আপনার কোনো একাউন্ট নেই তাই আপনি একটি একাউন্ট তৈরি করে নিন। আপনার নাম, মেবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র সহ যাবতীয় তথ্য প্রদান করে খুব সহজেই একটি একাউন্ট তৈরি করে নিতে পারবেন।
- একাউন্ট তৈরি করা হয়ে গেলে Purchase Ticket নামক অপশনে ঢুকবেন। এখানে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সকল ইনফরমেশন প্রদান করে টিকেট সংগ্রহ করবেন। আপনার গন্তব্য, কখন যেতে চান, কোন শ্রেনির টিকেট বুক করবেন, কয়টি টিকেট সংগ্রহ করবেন তার সকল তথ্য দেয়া হয়ে গেলে টিকেট এভেইলএবেল আছে কিনা তা প্রদর্শন করা হবে। কাঙ্খিত টিকেট পেয়ে গেলে অনলাইন পেমেন্ট করলেই আপনার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে বুক করা হয়ে যাবে।
- অনলাইনে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে আপনি বিকাশ, রকেট ডাচ বাংলা ব্যাংকিং কিংবা ভিসা কার্ড ব্যবহার করতে পারেন।
- অবশেষে আপনার টিকেট টি ডাউনলোড করে নিতে হবে এবং একটা কপি প্রিন্টআউট করে নিতে হবে। যাত্রার সময় প্রিন্ট আউট করা কপিটি আপনার সাথে রাখবেন।
আশাকরি অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং এর পুরো প্রক্রিয়াটি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। এরপর থেকে স্টেশনে লাইন না দিয়ে সহজেই ট্রেনের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে সংগ্রহ করতে পারবেন।
শেষ কথা
ইতোমধ্যে কমলাপুর থেকে নরসিংদী ট্রেনের সময়সূচি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাই আপনি আপনার সময় ও সুযোগ অনুযায়ী রেলপথে কমলাপুর থেকে নরসিংদী ভ্রমণ করতে পারবেন। আশাকরি আপনাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি উপকারী ছিল। একটি নিরাপদ ও সুপরিকল্পিত ভ্রমণের শুভেচ্ছা রইলো। ধন্যবাদ।