গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা - গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়
আপনি যদি গ্যাসট্রিক সম্পর্কে যেকোন তথ্য জানতে চান।গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কেমন হয়। গ্যাস্ট্রিকের বুকের ব্যথা গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কিত।
সব রকম প্রশ্ন আপনাদের মনে থাকে সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি আজকে আমাদের এই ওয়েবসাইটের মধ্যে পেয়ে যাবেন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো দেখুন।
গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা
বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনধারা হয়ে উঠেছে ব্যস্ততাপূর্ণ । আর কর্মব্যস্ত এই জীবনে মানুষ তার দৈনন্দিন রুটিনের কাজ ঠিকঠাক মতো সামলে উঠতে গিয়ে তার বায়োলজিক্যাল বডি ক্লক অনুযায়ী যে কাজগুলো যখন করা প্রয়োজন সে কাজগুলো ঠিকঠাক মতো সম্পাদন করে না । বায়োলজিক্যাল বডি ক্লকের মধ্যে যে যে কাজগুলো অন্তর্ভুক্ত সেগুলো হল - সঠিক সময় মত খাওয়া-দাওয়া করা, সময়মত ঘুমানো , সময়মতো ব্যায়াম করা ইত্যাদি। আর ব্যস্ততা পূর্ণ এই জীবনের উক্ত এই কাজগুলো না করার কারণে বিভিন্ন রকমের অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে যার মধ্যে অন্যতম একটি হল গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যথা ।
তবে মানুষ অনেক সময় বুঝে উঠতে পারে না যে সেটি “গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা নাকি হার্টের ব্যাথা ?
হার্টের ব্যাথা গ্যাস্ট্রিক এর ব্যাথার তুলনায় অনেক তীব্র ভাবে অনুভূত হয় । তবে মানুষ সাধারণত তা বুঝতে পারে না এবং হার্টের ব্যাথাকে গ্যাস্ট্রিক এর ব্যাথা ভেবে ভুল করে ।
এখন প্রশ্ন হলো “হার্টের ব্যথা বুকের কোন পাশে হয় ?
বুকের মাঝখানে এবং বাঁ দিকে হার্টের ব্যথা হয় ।
এছাড়াও হতে পারে মানসিক কারণে বুকে ব্যাথা। অনেক সময় মানুষ বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে এবং এ থেকে সৃষ্টি হয় মানসিক চাপ আর মানসিক চাপের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যথা আমাদের কাছে কোন অপরিচিত রোগ নয় বরং অত্যন্ত পরিচিত একটি রোগের নাম । এই রোগের নাম জানে না বা এই রোগের শিকার হয়নি এমন কোন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না । বরং বলা যায় এই রোগটিকে মানুষ এখন তার দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ বানিয়ে ফেলেছে । কিন্তু রোগ কখনোই জীবনের অংশ হতে পারে না কারণ রোগ জিনিসটি মানব শরীরের জন্য অহিতকারী একটি সমস্যা । আর মানুষ যদিও বর্তমানে গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যথা সমস্যাটিকে সাধারণ একটি সমস্যা বলে গণ্য করে কিন্তু এটি মোটেও সাধারণ একটি সমস্যা নয় বরং সময় মত এর যদি চিকিৎসা না করা হয় সেক্ষেত্রে ফলাফল খুব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে উদাহরণস্বরূপ এর ফলাফল হয়ে উঠতে পারে গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসার , যেখান থেকে সূত্রপাত ঘটে পাকস্থলী ক্যান্সারের মতো একটি মারাত্মক রোগের ।
এজন্য সকলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের আজকের বিষয়বস্তুতে গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যথা জনিত যেসব বিষয় আলোচনা করবো তা হলো - গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণ,গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়, গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা, গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম, গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায়।
দৈনন্দিন জীবনে সম্মুখীন হওয়া এই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সূত্রপাত হয় দীর্ঘদিন যাবত লিভারের প্রদাহ থেকে এবং এই সমস্যাকে শনাক্ত করার জন্য গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ গুলি জেনে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন নিচে।গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ গুলো উল্লেখ করা হলো -
ক্ষুধা কমে যাওয়া:
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার প্রধান একটি লক্ষণ হল ক্ষুধা কমে যাওয়া এই সমস্যা দেখা দিলে প্রায়শই দেখা যায় ক্ষুধা লাগার পরে সামান্য মাত্রায় কিছু খাবার খাওয়ার পরেই আর খাবার খাওয়ার ইচ্ছে করে না । এটিকে ক্ষুধা মন্দাও বলা হয়
বমি-বমি ভাব :
দীর্ঘ সময় যাবত যখন পেট খালি থাকে তখন লিভার থেকে বিনি বের হয়ে গলব্লাডারে জমা হয় । হে তরলটি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে এবং সে সময় বমি বমি ভাব অনুভূত হয় এটি গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম একটি প্রাথমিক লক্ষণ ।
পেটে জ্বালা :
গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হলে প্রথম অবস্থায় পেটে এসিডিটি হয় এবং সেই এসিডিটি থেকে পেটে জ্বালা অনুভূত হয়। এ সময় খুব অস্বস্তিকর বোধ হয় । অনেক সময় এই এসিডিটির কারণে পেট স্ফীত হয়ে যায় এবং খাবার হজমেও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা -
গ্যাস্ট্রিকের আক্রান্ত হলে অন্যতম যে লক্ষণ টি দেখা দেয় তা হল ব্যথা অনুভূত হওয়া । এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয় নিচে সে সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো -
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়
পেটে ব্যথা:
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিলে মানুষ সে সমস্যা থেকে উৎপন্ন ব্যথা অনুভব করে । এই ব্যথা সাধারণত তো মানব শরীরের উপর পেটে হয় । অনেক সময় খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই এই ব্যথা বৃদ্ধি পায়।উপর পেটে এই ব্যথা হয় খুবই তীক্ষ্ণ চিনচিনে ধরনের। তবে এই ব্যথা সবসময় যে শরীরের উপর পেটেই হবে এমনটি নয় । মাঝে মাঝে পেট ও বুকের মাঝখানে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা অনুভূত হতে পারে । আবার কখনও কখনও দেখা যায় গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বুকের ডান পাশ এবং বাম পাশ উভয়দিকেই হয়ে থাকে ।
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা :
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা চলাকালীন আরো একটি যে উপসর্গ দেখা দেয় সেটি হল গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যথা । মূলত গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নামক সমস্যার কারণে গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যথা হয়ে থাকে । তবে রোগের এই উপসর্গটিকে অনেকেই হালকা ভাবে নিয়ে থাকে এবং এটির উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন বোধ করেন না। কিন্তু এটি একেবারেই ঠিক নয় কারণ এই সমস্যাটিকে হালকা ভাবে নেওয়ার কারণে পরবর্তীতে অনেক বড় ভোগান্তির সম্মুখীন হতে পারেন রোগী।
গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায় :
কিছু নিয়ম মেনে ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করা সম্ভব । নিচে সেই গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো উল্লেখ করা হলো -
ভেষজ চা গ্রহণ করা:
মৌরি আদা এই ধরনের ঘরোয়া ভেষজ জিনিস দিয়ে তৈরি চা তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাস্ট্রিকের জ্বালাপোড়া এবং এসিডিটি ভাব কমিয়ে দিতে সক্ষম তাই নিয়মিতভাবে এইটা গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে ।
ডাবের জল গ্রহণ করা-
ডাবের জল শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে এবং এর পাশাপাশি হজম শক্তিও বাড়ায় যার ফলে পেটে অম্বল রোধ হয় এবং এতে বিদ্যমান ফাইবারের কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যায় ।
খাবার তালিকাতে পেঁপে যোগ করা :
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে খাবার তালিকাতে অবশ্যই পেঁপে যোগ করতে হবে। এতে রয়েছে প্যাপেইন নামক একটি এনজাইম যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং এতে বিদ্যমান অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি যৌগ পরিপাকতন্ত্রের অনুকূলে কাজ করে । এর পাশাপাশি এতে রয়েছে প্রাকৃতিক এন্টাসিড যেটির কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একেবারে নির্মূল হয়ে যায় ।
পুদিনা পাতা গ্রহণ করা :
কিছু পরিমাণ পুদিনা পাতা নিয়ে তা গরম পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে নিয়মিতভাবে গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তবে শুধুমাত্র এই একটি উপায়ে পুদিনা পাতা গ্রহণ করতে হবে এমনটি নয় । পুদিনা পাতার জুস বা পুদিনার চাটনি গ্রহণ করার ফলেও এই সমস্যা থেকে উপশম পাওয়া যায় ।
নিয়মিত ভাবে ঠান্ডা দুধ গ্রহণ করা:
নিয়মিতভাবে প্রতিদিন এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ গ্রহণ করলে এসিডিটি উপশম হয় । তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে দুধ যেন সুগার ফ্রি এবং ফ্যাট ফ্রী হয়, অন্যথায় এই ঘরোয়া রেমিডি কাজ করবে না । দুধে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম পেটে এসিড তৈরিতে বাধা দেয় যে কারণে দ্রুতই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা উপশম হয় ।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম :
নিয়মিতভাবে মেথি গ্রহণ করা হলে গ্যাস্টিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে যা হল
- - এক গ্লাস পানিতে আস্ত মেথি এক চা চামচ পরিমাণ ভিজিয়ে রাখতে হবে ।
- - অন্ততপক্ষে ১০ মিনিট সেই মেথি পানিতে ভেজানো থাকতে হবে।
- - উক্ত মেথি ভেজানো পানি সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গ্রহণ করতে হবে ।
কাঁচা হলুদ খাবারে যোগ করা:
কাঁচা হলুদের রয়েছে অধিক পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য । তাই খাবারে কাঁচা হলুদ পেস্ট অথবা কাঁচা হলুদের রস সকালে খালি পেটে গ্রহণ করলে তাতে পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং প্রদাহ কমে যায় ।
উপসংহার :
মানুষের জীবন এখন কর্মব্যস্ততায় ভরে উঠলেও যদি একটু সতর্কতার সাথে বায়োলজিক্যাল বডি ক্লক মেনে চলে সময় মতো খাবার গ্রহণ করা এবং সামান্য কিছু এই ঘরোয়া উপায়গুলো দৈনন্দিন খাবার তালিকায় রাখা হয় তাহলে গ্যাস্ট্রিকের এই সমস্যাগুলোর সমাধান অনায়াসেই হয়ে যাবে তবুও যদি কারো এরকম সমস্যা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে রাখলে সে সময় মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবে এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে ।