যক্ষা বা টিবি রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা, এবং ৯টি প্রতিরোধমূলক উপায়

যক্ষা রোগের চিকিৎসা সম্ভব। যক্ষা রোগের প্রধান লক্ষণসমূহ হলো: দীর্ঘস্থায়ী কাশি, সংক্রামিত অংশ ফুলে ওঠা, ওজনরা হ্রাস, জ্বর।
যক্ষা বা টিবি রোগের লক্ষণ
আজকে ওয়েবসাইটে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো যক্ষা বা টিবি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে এবং ৯টি প্রতিরোধমূলক উপায় আলোচনা করা হলোঃ

যক্ষা

শিশু ,প্রাপ্তবয়স্ক, বৃদ্ধ সবাই যক্ষা বা টিবি রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।তবে কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং ধূমপায়ী ব্যক্তিদের এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সর্বোচ্চ।

যক্ষা বা টিভি বায়ুবাহিত সংক্রমণ রোগ যা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট। প্রধানত দুই ধরনের যক্ষা দেখা যায় সুপ্ত যক্ষা এবং সক্রিয় যক্ষা।

এ রোগে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করছেন। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষা রোগ ভালো হয়।

যক্ষা রোগের লক্ষণ :

  • ১.ক্ষুধামান্দ্য।
  • ২.রাতে ঘাম হওয়া ।
  • ৩.চরম ক্লান্তি অনুভব করা।
  • ৪.বুকে ও পিঠে ব্যথা ।
  • ৫. তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাশি।
  • ৬. কাশির সাথে রক্ত পড়া।
  • ৭. রোগীর ওজন হ্রাস পাওয়া।

যক্ষা রোগের কারণ:

  • ● যক্ষা রোগীর সংস্পর্শে আসা ।
  • ● বায়ু দূষিত অঞ্চলে বসবাস করা।
  • ● রোগের জেনেটিক প্রবণতা।

যক্ষায় আক্রান্ত অঙ্গ:

টিবিতে শুধু ফুসফুস আক্রান্ত হয় এটি ভুল ধারণা টিবিতে আক্রান্ত হতে পারে ফুসফুস ,পরিপাকতন্ত্র, পাকস্থলী ,টনসিল ,এড্রোনাল গ্রন্থি এমনকি মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ড ।এ রোগের লক্ষণ কোন রোগীর মধ্যে দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

প্রতিকারের তুলনায় প্রতিরোধ শ্রেয়। তাই আমাদের সবাই কে এই রোগের প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।

যক্ষা রোগের ৯টি প্রতিরোধমূলক উপায়:

১,জন্মের পরে সকল শিশুকে বিসিবি টিকা দিতে হবে ।

২,যক্ষা আক্রান্তদের ঘনিষ্ঠ সহচার্য এড়িয়ে চলতে হবে।

৩, পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

৪, নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে।

৫,বাসস্থানের পরিবেশ খোলামেলা ও আলো বাতাস পূর্ণ রাখতে হবে।

৬,ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ ধরনের রোগ থাকলে নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৭,সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

,যক্ষা আক্রান্ত রোগীকে নাক মুখ ঢেকে চলাচল করতে হবে । এ রোগের জীবাণুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যেখানে সেখানে কফ, থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। সম্ভব হলে মাটিতে গর্ত করে কফ ,থুথু ফেলে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং যতদিন পর্যন্ত তারা সুস্থ না হয় তাদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯,ওষুধের কোর্স শেষ করতে হবে এবং বাইরে চলাফেরার সময় মাক্স ব্যবহার করতে হবে।

যক্ষা রোগ কিভাবে ছড়ায়:

বাতাসের মাধ্যমে যক্ষা রোগের জীবাণু ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে গিয়ে মিশে এবং রোগের সংক্রমণ ঘটায়।

ঝুঁকির কারণ:

দুর্বল ইমিউনিটি সিস্টেম (এইচআইভি এইডস বা অন্যান্য অবস্থার কারণে), ধূমপান, জনাকীর্ণ পরিবেশে বসবাস বা কাজ করা ,পদার্থের অপব্যবহার, স্বাস্থ্য সেবার অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা সহ বেশ কয়েকটি কারণ টিভি রোগীর ঝুঁকি বাড়ায়।

কখন ডাক্তার দেখাতে হবে:যদি অবিরাম কাশি( তিন সপ্তাহের বেশি কাশি স্থায়ী), বুকে ব্যথা, কাশিতে রক্ত বা থুতু, ব্যাখ্যাতীত ওজন হ্রাস, ক্লান্তি, জ্বর ,রাতে ঘাম-ভাব অনুভব করে তবে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

যক্ষা নির্ণয়ের পদ্ধতি

এ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রথমে এমটি পরীক্ষা করা হয়। এরপর স্পুটাম, এক্স-রে, এফএনএসি করা হয়। এখন আধুনিক পরীক্ষা হলো জিন এক্সপার্ট।

১.মেডিকেল ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা: স্বাস্থ্যসেবা প্রধান কারী রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস, উপসর্গ নিয়ে আলোচনা করে এবং টিভি সংক্রমণের লক্ষণ যেমন লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া বা ফুসফুসের অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে শব্দ চেক করার জন্য একটি শারীরিক পরীক্ষা করে থাকে।

২. টিউবারকুলিন স্কিন টেস্ট (টিএসটি): এই পরীক্ষায় রোগীর হাতের ত্বকে অল্প পরিমাণের PPD টিউবারকুলিন ইঞ্জেকশন করা হয়। যদি টিভি সংক্রমণ থাকে তাহলে ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে ইঞ্জেকশন কর জায়গায় একটি উত্থাপিত বাম্প দেখা যায়।

৩. রক্ত পরীক্ষা :রক্ত পরীক্ষা যেমন ইন্টারফেরন-গামা রিলিজ এ অ্যাসেস টিভি সংক্রমণ সনাক্ত করতে সাহায্য করে।

৪.বুকের এক্সরে বা সিটি স্ক্যান:বুকের এক্সরে বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ফুসফুস বা শরীরের অন্যান্য অংশের টিভি সংক্রমণের লক্ষণ পরীক্ষা করা হয়।

৫. স্পুটাম টেস্ট: থুতুর একটি নমুনা (ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা কাশি) সংরক্ষণ করা হয় এবং মাইক্রোস্কোপের নিচে বিশ্লেষণ করা হয় বা টিবি ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করতে কালচার করা হয়।

৬. অন্যান্য টেস্ট:লক্ষণ এবং সংক্রমণের সন্দেহজনক অবস্থার ওপর নির্ভর করে বায়োপসি বা অন্যান্য ইমেজিং স্টাডির মত অতিরিক্ত পরীক্ষা সুপারিশ করা হয়ে থাকে ।

যক্ষা বা টিবি রোগের চিকিৎসা:

● টিবি রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করা হয়। আইসোনিয়াজিড, রিফাম্পিন, ইথামবুটল এবং পাইরাজিনামাইড বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ টিবি রোগের জন্য।

● DOT পদ্ধতিতে অর্থাৎ সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হয়।

● ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের ধরন , মাত্রা এবং রুগীর বয়স অনুসারে ঔষধের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।

● সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাসব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করতে হয়।

● টিবি রোগের আরও একটি চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হোমিওপ্যাথি।

সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে যক্ষা রোগ থেকে আরোগ্য লাভ সম্ভব।

বাংলাদেশের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ,জেলা সদর হাসপাতাল ,বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ,নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ,এনজিও ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহে বিনামূল্যে রোগীর কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয় সহ যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হয় এবং ওষুধ দেওয়া হয়।

যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা কমানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সকলের সচেতন থাকা জরুরী। টিভি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি নানান সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং ধূমপান বর্জনের মধ্য দিয়ে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন