একাদশী তালিকা ২০২৩ ইসকন - একাদশী তালিকা ২০২২ গোস্বামী মতে
আপনারা যারা একাদশী পালন করেন এবং নতুন করে যারা ২০২৪ সালে একাদশী পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়ছেন, তাদের সকলের জন্য ইসকন এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একাদশী তিথী পালন করা উচিত।
নিচে২০২৪ সালের একাদশী তালিকা গোস্বামীর মত অনুযায়ী দেয়া হল- আপনারা সবাই একাদশী তালিকাঅনুযায়ী একাদশী পালন করার চেষ্টা করবেন।
একাদশী তালিকা ২০২৪ ইসকন
২০২৪ সালের একাদশীর তালিকা, ইসকনঃ-
একাদশী তালিকা ২০২৪ গোস্বামী মতে
২০২৪ সালের একাদশী তালিকা, গোস্বামী মতেঃ-
একাদশী কি?
সনাতন ধর্মের যত তিথি রয়েছে তার থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ তিথি হল এই ‘‘একাদশী তিথি’’। একাদশী শব্দের বাংলা অর্থ একাদশ অর্থাত্ এগারো বত্সর বয়স্কা। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার যে একাদশ তম দিন সেই দিনে একাদশী ব্রত পালন করতে হয়। এবং এই একাদশী পালন করার জন্য শাস্ত্রে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই একাদশী পালনের জন্য শত শত মাহাত্ম্য রয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড়া প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট রয়েছে। তাই মায়া তাকে এ জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে। পরম করুণাময় ভগবান কৃষ্ণস্মৃতি জাগরিত করতে মায়াগ্রস্ত জীবের কল্যাণে বেদপুরাণ আদি শাস্ত্রগ্রন্থাবলী দান করেছেন। ভক্তি হচ্ছে ভগবানকে জানার ও ভগবৎ প্রীতি সাধনের একমাত্র সহজ উপায়। শাস্ত্রে যে চৌষট্রি প্রকার ভক্ত্যাঙ্গের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একাদশী ব্রত সর্বোত্তম।
একাদশী কতগুলো?
সাধারণত ১২ মাসে চব্বিশটি একাদশী।যথা-- ১. উৎপন্না একাদশী,
- ২. মোক্ষদা একাদশী,
- ৩. সফলা একাদশী,
- ৪. পুত্রদা একাদশী,
- ৫. ষট্তিলা একাদশী,
- ৬. জয়া/ ভৌমী একাদশী,
- ৭. বিজয়া একাদশী,
- ৮. আমলকী একাদশী,
- ৯. পাপমোচনী একাদশী,
- ১০. কামদা একাদশী,
- ১১. বরুথিনী একাদশী,
- ১২. মোহিনী একাদশী,
- ১৩. অপরা একাদশী,
- ১৪. নির্জলা একাদশী,
- ১৫. যোগিনী একাদশী,
- ১৬. শয়ন একাদশী,
- ১৭. কামিকা একাদশী,
- ১৮. পবিত্রা একাদশী,
- ১৯. অন্নদা একাদশী,
- ২০. পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী,
- ২১. ইন্দিরা একাদশী,
- ২২. পাশাঙ্কুশা একাদশী,
- ২৩. রমা একাদশী,
- ২৪. উত্থান একাদশী।
কিন্তু যে বছর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা মলমাস থাকে, সেই বৎসর ২৫.পদ্মিনী একাদশী ও ২৬.পরমা একাদশী নামে আরও দুটি একাদশী যুক্ত হয়। সেক্ষেত্রে দাঁড়ায় ছাব্বিশটি একাদশী।
একাদশী পালনের নিয়মাবলী
একাদশীর মূল কাজ হল– নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা । তাই আপনারা যে নিয়মে, যে সময়ে পালন করুন না কেন, ভগবানকে ভক্তিভরে স্মরণ করাই যেন আপনারই মূল কাজ হয়।
ভোরে শয্যা ত্যাগ করে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।”
একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মের মধ্যে রয়েছে -সামর্থ্য অনুযায়ী দশমী তে একাহার, একাদশী তে নিরাহার, দ্বাদশীতে একাহার । এতে অসমর্থ হলে শুধু একাদশীতে অনাহার। যদি উহাতেও অসমর্থ হন, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করতঃ ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে। একাদশী তিথী তে এই ৫ ধরনের রবি শস্য জাতীয় খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রে কড়া নিষেধ রয়েছে। এছাড়াও একাদশীতে গায়ে তেল মাখা, সাবান মাখা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দিবানিদ্রা (দিনে ঘুম), সাংসারিক আলাপাদি একদম বর্জনীয়।
একাদশীর খাদ্য তালিকা
অনকেই একাদশী পালন করে থাকেন কিন্তু অনেক মানুষের কাছে একাদশীতে কি কি খাওয়া যাবে, কি খাওয়া যাবেনা এই বিষয়টি অস্পষ্ট হওয়ায় তারা অনেক সময় একাদশীর দিন ভুল খাবার গ্রহণ করে ফেলে।
একাদশী ব্রত পালন করে কি কি খাওয়া যাবে?
- সব রকমের ফল।
- লেটুস পাতা।
- বাধাকপি।
- ফুলকপি।
- কারি পাতা।
- ঘরে বানানো ছানা।
- পনির।
- দই।
- ফ্রেস ক্রিম।
- মরিচ
- লবন
- ঘী
- মাখন
- পালং শাক
- জলপাই তেল
- আলু
- মিষ্টি আলু
- কুমড়া
- কাচা কল
- চালকুমড়া
- বাদাম তেল
- চিনি
একাদশী তে কি কি খাবার গ্রহন করা নিষধ?
একাদশী তে পাঁচ প্রকারের রবি শস্য গ্রহন করতে নিষেধ করা হয়েছে। একাদশী তিথির মধ্যে- চাল, গম, তৈল, যব ও ভুট্টা এই পাঁচ প্রকার শস্য থেকে প্রস্তুত কোনো প্রকার খাবার খাওয়া নিষেধ।
১. ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – চাউল,মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েশ, খিচুড়ি, ইত্যাদি।
২.সরিষার তৈল , সয়াবিন তৈল, তিল তৈল ইত্যাদি ।
২.সরিষার তৈল , সয়াবিন তৈল, তিল তৈল ইত্যাদি ।
৩. গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য। যেমন -আটা,ময়দা, সুজি , বেকারীর রূটি, ইত্যাদি।
৪. ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য। যেমন- মুগ মাসকলাই , খেসারী , মসুরী, ছোলা অড়রহ , ইত্যাদি।
৫. যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য। যেমন- ছাতু , খই , রূটি ইত্যাদি ।
উত্তর: অবশ্যই সন্ধুক লবণ ব্যবহার করতে হবে, এটা শুধু মাত্র একাদশী নয়, সব উপবাসের জন্যই প্রযোজ্য ।
৪. ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য। যেমন- মুগ মাসকলাই , খেসারী , মসুরী, ছোলা অড়রহ , ইত্যাদি।
৫. যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য। যেমন- ছাতু , খই , রূটি ইত্যাদি ।
একাদশীর আগের দিন আমিষ খাওয়া যাবে
একাদশী ব্রত পালনের মূল কাজ হল নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা। একাদশী ব্রতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করা। একাদশীর পূর্ব দিনে অবশ্যই রাত ১২ বাজার পূর্ব অন্ন গ্রহন শেষ করতে হবে এবং সেটা অবশ্যই নিরামিষ হতে হবে। একাদশী মানে আমদের পঞ্চইন্দ্র নাক, কান, চোখ, বাক এবং নাসিকা এসবকে সংযত রেখে এক মনে ঈশ্বরের চিত্রে নিজে রাখা। তাই একাদশীর আগের দিন থেকে আমিষ ভোজন থেকে পুরপুরি বিরত থাকতে হবে।
পাণ্ডব নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য।
জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের এই নির্জলা একাদশী ব্রত সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে শ্রীভীমসেন-ব্যাসসংবাদে বর্ণিত হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন, হে জনার্দন! আপনি এখন জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য আমার কাছে বর্ণনা করুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এই একাদশীর কথা মহর্ষি ব্যাসদেব বর্ণনা করবেন। কেননা তিনি সর্বশাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্ব পূর্ণ রূপে জানেন। রাজা যুধিষ্ঠির ব্যাসদেবকে বললেন, হে মহর্ষি দ্বৈপায়ন। আমি মানুষের লৌকিক ধর্ম এবং জ্ঞানকাণ্ডের বিষয়ে অনেক শ্রবণ করেছি।
আপনি যথাযথ ভাবে ভক্তিবিষয়িনী কিছু ধর্মকথা এখন আমায় বর্ণনা করুন। শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে মহারাজ। তুমি যে সব ধর্মকথা শুনেছ, এই কলিযুগের মানুষের পক্ষে সে সমস্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন। যা সুখে, সামান্য খরচে, অল্প কষ্টে সম্পাদন করা যায় অথচ মহাফল প্রদান করে এবং সমস্ত শাস্ত্রের সারস্বরূপ সেই ধর্মই কলিযুগে মানুষের পক্ষে করা শ্রেয়।
সেই ধর্মকথাই এখন আপনার কাছে বলছি। উভয় পক্ষের একাদশী দিনে ভোজন না করে উপবাস ব্রত করবে। দ্বাদশী দিনে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়ে নিত্যকৃত্য সমাপনের পর শ্রীকৃষ্ণের অর্চন করবে। এরপর ব্রাহ্মণদের প্রসাদ ভোজন করাবে। অশৌচাদিদেও এই বৃত কখনও ত্যাগ করবে না। যে সকল ব্যক্তি স্বর্গে যেতে চান, তাঁদের সারা জীবন এই ব্রত পালন করা উচিত। পাপকর্মে রত ও ধর্মহীন ব্যক্তিরাও যদি এই একাদশী দিনে ভোজন না করে, তবে তাঁরা যমযাতনা থেকে রক্ষা পান।
শ্রীব্যাসদেবের কথা শুনে গদাধর ভীমসেন অশ্বত্থ পাতার মতো কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলেন, হে মহাবুদ্ধি পিতামহ। মাতা কুন্তী,দ্রৌপদী, ভ্রাতা যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকূল ও সহদেব এরা কেউই একাদশীর দিন ভোজন করেন না। আমাকেও অন্ন গ্রহণ করতে নিষেধ করে। কিন্তু দু:সহ ক্ষুধা যন্ত্রণার জন্য আমি উপবাস করতে পারি না। ভীমসেনের এরকম কথায় ব্যাসদেব বলতে লাগলেন, যদি স্বর্গাদি দিব্যধাম লাভে তোমার একান্ত ইচ্ছা থাকে, তবে উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করবে না।
তদুত্তরে ভীমসেন বললেন, আমার নিবেদন এই যে, উপবাস তো দূরের কথা, দিনে একবার ভোজন করে থাকাও আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ আমার উদরে ‘বৃক’ নামে অগ্নি রয়েছে। ভোজন না করলে কিছুতেই সে শান্ত হয় না। তাই প্রতিটি একাদশী পালনে আমি একেবারেই অপারগ। হে মহর্ষি। বছরে একটি মাত্র একাদশী পালন করে যাতে আমি দিব্যধাম লাভ করতে পারি এরকম কোন একাদশীর কথা আমাকে নিশ্চয় করে বলুন। তখন ব্যাসদেব বললেন, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জলপান পর্যন্ত না করে সম্পূর্ণ উপবাস থাকবে। তবে আচমনে দোষ হবে না। এই দিন অন্নাদি গ্রহণ করলে ব্রত ভঙ্গ হয়।
একাদশীর দিন সূর্যোদয় থেকে দ্বাদশীর দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জলপান বর্জন করলে অনায়াসে বারোটি একাদশীর ফল লাভ হয়। বছরের অন্যান্য একাদশী পালনে অজান্তে যদি কখনও ব্রতভঙ্গ হয়ে যায, তা হলে এই একটি মাত্র একাদশী পালনে সেই সব দোষ দূর হয়। দ্বাদশী দিনে ব্রাহ্ম মুহূর্তে স্নানাদিকার্য সমাপ্ত করে শ্রীহরির পূজা করবে। সদাচারী ব্রাহ্মণদের বস্ত্রাদি দান-সহ ভোজন করিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে নিজে ভোজন করবে। এরূপ একাদশী ব্রত পালনে যে প্রকার পুণ্য সঞ্চিত হয়, এখন তা শ্রবণকর। সারা বছরের সমস্ত একাদশীর ফলই এই একটি মাত্র ব্রত উপবাসে লাভ করা যায়।
সর্বাধিক প্রশ্ন উত্তর
একাদশীতে কি লবণ খাওয়া যায় ?
একাদশীতে কি ঔষধ খাওয়া যাবে?
উত্তর: একাদশী,জন্মাষ্টমী সহ সকল উপবাসে ঔষধ খেলে উপবাস বা ব্রত ভঙ্গ হয় না।একাদশীতে কি বাদাম খাওয়া যায় ?
উত্তর:হ্যা। বাদাম এবং বাদাম জাত তেল গ্রহন করলে একাদশী ব্রত ভাঙে না।একাদশীতে কি জল খাওয়া যায় ?
উত্তর: হ্যা, একাদশী তে জল পান করা যাবে। তবে যারা নির্জলা একাদশী পালন করবেন তারা জলপান করতে পারবেন না ।অষ্টৈতানাব্রতাঘ্নানি আপো মূলং ফলং পয়ঃ।হবির্ব্রাহ্মণকাম্যা চ গুরোর্বচনমৌষধম্।
অর্থঃ- আটটি দ্রব্য গ্রহনে ব্রত ভঙ্গ হয় না । তা হলো জল, মূল, ফল, দুধ, ঘৃত, ব্রাহ্মণকাম্যা, গুরুদেবের বচন এবং ঔষধ।"
একাদশী তে মৃত্যু হলে কি হয়?
উত্তর: একাদশী থাকাকালীন যদি কেও মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে স্বর্গে নয়, তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠে গমন করে।উপসংহার
হিন্দু ধর্মে একাদশীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। একাদশী তিথি ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা হয়। একাদশীর দিন রীতি অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণুর পূজা করা হয়। ধার্মিক মান্যতা অনুসারে একাদশী ব্রত রাখলে সমস্ত রকম পাপ থেকে মুক্তি ঘটে,এর সাথে সাথে সমস্ত রকমের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। মনে করা হয় একাদশী ব্রত করলে মৃত্যুর পর মোক্ষ প্রাপ্তি ঘটে। একাদশী ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয়, অশ্বমেধ, রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞদ্বারাও তা হয় না। দেবরাজ ইন্দ্রও যথাবিধি একাদশী পালনকারীকে সম্মান করেন। একাদশী ব্রতে ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। অনাহার থেকে হরিনাম, হরিকথা, রাত্রিজাগরণে একাদশী পালন করা কর্তব্য।